ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কৃষকদের মানববন্ধন লক্ষীপুরের খাল খননের দাবিতে

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকায় অবৈধভাবে খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে
  • আপলোড তারিখঃ 05-05-2025 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 64269 জন
কৃষকদের মানববন্ধন লক্ষীপুরের খাল খননের দাবিতে ছবির ক্যাপশন: কৃষকদের মানববন্ধন লক্ষীপুরের খাল খননের দাবিতে
ad728

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকায় অবৈধভাবে খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকার কৃষক, চাষী ও এলাকাবাসী। রোববার ( ৪ মে ) সকালে তোরাবগঞ্জ মতিরহাট সড়কের তুলাতুলি-মুসারখালের দখল হয়ে যাওয়া অংশের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে এলাকার শতাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী অংশ গ্রহন করে।এসময় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য ও খাল দখল করে ইমারত নির্মাণ অব্যাহত রাখায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কৃষকরা।


অভিযুক্ত দখলকারী ফারজানা আক্তার গং মতিরহাট বাজার এলাকার মরহুম আবি আবদুল্লাহর ওয়ারিশ।


কৃষকদের এ মানববন্ধনে কমলনগর উপজেলা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, মানবাধিকরা সংগঠনসহ নাগরিক সমাজ একাত্মতা ঘোষণা করেন।


কৃষক আবুল হাসেম, আবদুল হক, আবদুর রহিম জানায়, এ খালে পানি নামার প্রতিবন্ধকতা থাকায় গত ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় তোবারগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৩ প্লাবিত ছিল। কৃষকদের হাজার হাজার একর জমির ফসল তলিয়ে যায়। কৃত্রিম জলাবদ্ধতার শিকার হয় কয়েক হাজার এলাকাবাসী।


মানববন্ধনে অংশ গ্রহনকারী কৃষক হাসেম বলেন, তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ ইউনিয়নকে বিভক্তকারী তুলাতুলি খাল। দীর্ঘ প্রায় ৭০-৮০ বছরের পুরানো খালটি দিয়ে প্রায় ১০-১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়। খালটি এলাকার ঐতিহ্যেরর সাথে মিশে রয়েছে।কৃষকরা জানায়, গত ২০২২ সাল ডিসেম্বর মাসের দিকে হঠাৎ করে দিকে তোরাবগঞ্জ পশ্চিম বাজার সংলগ্ন এলাকায় জনৈক ফারজানা আক্তার খালের মধ্যখানে পিলার দিয়ে মাটি ভরাট শুরু করে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসী বাঁধা দেয়। তখন কিছুদিন তিনি আর কাজ করেন নি। কিন্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে তিনি আবার খালের মধ্যখানে সিমেন্টের পিলার ও কাঠ দিয়ে প্রায় ১০ফুট চওড়া ও ৪০ফুট লম্বা খাল দখলে নেন। স্থানীয়রা বাঁধা দিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসকে অবগত করেন। পরবর্তিতে ভূমি সার্ভেয়ার ও তহশিলতার এসে দখলে থাকা সিমেন্ট ও কাঠের সরাঞ্জম গুলো ভেঙে দখলমুক্ত করেন। এনিয়ে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রশাসন কর্তৃক দখলমুক্তকরণের সংবাদ প্রকাশিত হয়।কৃষকরা জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেই ফারজানা আক্তার খালকে নিজের জায়গা দাবী করে খালের মধ্যে দেড়ফুট ব্যাসার্ধের ৪টি আরসিসি পিলার তৈরি করে। এটা নিয়ে স্থানীয়রা ৩য় বারের ন্যায় আবারো বাঁধা দেয়। প্রশাসনের বাঁধায় কিছুদিন তিনি কাজ বন্ধ রাখেন।


গত মার্চ মাসে স্থানীয় এলাকাবাসীদের উপস্থিতিতে ফারজানা আক্তার ও খালের সীমানা মেপে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্ত তিনি সেটাও অমান্য করে আবারো রাতের আঁধারে ইমারত নির্মাণ অব্যাহত রাখেন।৪র্থ বারের ন্যায় গত ৩০ এপ্রিল কমলনগর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, উপজেলা সার্ভেয়ার, তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের তহসিলদার সরেজমিনে এসে তাকে খাল দখলের নিষেধ করেন।


দৈনিক আজকের পত্রিকার কমলনগর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ ইব্রাহীম জানান, ফারজানা কর্তৃক অব্যাহত ভাবে অবৈধ খাল দখলের নিউজ প্রকাশ করায় ফারজানা আক্তার আমিসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ। তিনি আরো বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেই সাংবাদিকরা খারাপ হয়ে যায়। আমরা কোন দখলদারদের ভয় পাই না, আমাদের কলম চলবে।


তোরাবগঞ্জ এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল কাদের জানান, তুলাতলি খালটি তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। মুসারখাল থেকে কাটাকালী খালি খাল পর্যন্ত খালটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৮ কিলোমিাটার। এ খালের বিভিন্ন অংশে ১৫জন অবৈধ দখলদার রয়েছে। দখলের বিষয়ে বলার পর তারা আমাকেও মামলার হুমকি দিয়েছিল। এ খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন ও সেচ কাজ করার জন্য বর্তমানে খালটি খনন করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তোরাবগঞ্জ দখল হয়ে যাওয়া এলাকায় খনন শুরু হবে। ২০২৬ সালের ইরি বরো মৌসুমে এ খাল দিয়ে পানি নিয়ে তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ এলাকার ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় চাষাবাদ করা হবে সে লক্ষ্যে কাজ করছে বিএডিসি। এলাকার বৃহৎ স্বার্থে এখানে দখলমুক্ত করা জরুরি বলে জানান এ কর্মকর্তা।


মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কমলনগর উপজেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা শরিফুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কমলনগর উপজেলা সভাপতি মাওলনা মোহাম্মদ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক, ছাত্রনেতা মোঃ নাঈম হোসেন, মাওলানা মাহফুজুর রহমান জাবেরী, বিএনপি কর্মী মোঃ শাহজাহান এবং কৃষক আবুল হাসেম, আবদুল মতিন প্রমুখ।জানতে চাইলে অবৈধ দখলকারী ফারজানা আক্তার বলেন, আমার কাগজপত্র সঠিক। আমি আমার জায়গায় দোকানঘর করছি।


উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আবু নূর সেলিম বলেন, আমাদের সমাজে দূর্নীতি রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করেছে। যার মধ্যে অন্যতম সরকারি সম্পাদ দখল। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকতে হবে। অবৈধ স্থাপনাটি ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানান তিনি।


জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরাফাত হোসাইন বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা অংশের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। এখন আমরা ওই স্থাপনা ভেঙ্গে দিবো।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ দৈনিক ভোরের সকাল

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ